• About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact
Tech News, Magazine & Review WordPress Theme 2017
  • Home
    • Home – Layout 1
    • Home – Layout 2
    • Home – Layout 3
    • Home – Layout 4
    • Home – Layout 5
No Result
View All Result
  • Home
    • Home – Layout 1
    • Home – Layout 2
    • Home – Layout 3
    • Home – Layout 4
    • Home – Layout 5
No Result
View All Result
Helpbn
No Result
View All Result

Poem in Bengali: বাংলা কবিতা (Bangla Kobita)

Help Bn by Help Bn
December 15, 2020
Home Social Media
Share on FacebookShare on Twitter
We all enjoy a little bit of Bangla Kobita every now and then. The following top 100 most famous Poems in Bengali are always best. The poem in Bengali can be so beautiful, rhythmic and meaningful. I think you must be like these Kobita Bengali.
Poem in Bengali: বাংলা কবিতা (Bangla Kobita)

Bangla Kobita (বাংলা কবিতা) is an art form in which human language is used for its aesthetic qualities in addition to, or instead of, its notional and semantic content. A poem in Bengali can be differentiated most of the time from prose, which is language meant to convey meaning in a more expansive and less condensed way.
  • আরো পড়ুন –প্রেমের কবিতা: সেরা ৫০টি ভালোবাসার কবিতা
  • আরো পড়ুন –ভালোবাসার কবিতা

Poem in Bengali

Bangla Kobita has always been a fancy of humankind that evoked certain emotions in them which other forms of art could never unleash. Perhaps the most vital element of sound in poetry is rhythm. Often the rhythm of each line is arranged in a particular meter. So let’s started and ready your favorite Poem in Bengali.

অক্ষমা
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যেখানে এসেছি আমি, আমি সেথাকার,
দরিদ্র সন্তান আমি দীন ধরণীর।
জন্মাবধি যা পেয়েছি সুখ দুঃখভার
বহু ভাগ্য বলে তাই করিয়াছি স্থির।
অসীম ঐশ্বর্যরাশি নাই তোর হাতে,
হে শ্যামলা সর্বসহা জননী মৃন্ময়ী।
সকলের মুখে অন্ন চাহিস জোগাতে,
পারিস নে কত বার– কই অন্ন কই’
কাঁদে তোর সন্তানেরা ম্লান শুষ্ক মুখ।
জানি মা গো, তোর হাতে অসম্পূর্ণ সুখ–
যা কিছু গড়িয়া দিস ভেঙে ভেঙে যায়,
সব-তাতে হাত দেয় মৃত্যু সর্বভুক,
সব আশা মিটাইতে পারিস নে হায়
তা বলে কি ছেড়ে যাব তোর তপ্ত বুক!

অনন্ত প্রেম
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে—
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি—
সকল কালের সকল কবির গীতি।

কৃষ্ণকলি
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাত্ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

আচল স্মৃতি
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার হৃদয়ভূমি-মাঝখানে
জাগিয়া রয়েছে নিতি
অচল ধবল শৈল-সমান
একটি অচল স্মৃতি।
প্রতিদিন ঘিরি ঘিরি
সে নীরব হিমগিরি
আমার দিবস আমার রজনী
আসিছে যেতেছে ফিরি।
যেখানে চরণ রেখেছে সে মোর
মর্ম গভীরতম—
উন্নত শির রয়েছে তুলিয়া
সকল উচ্চে মম।
মোর কল্পনা শত
রঙিন মেঘের মতো
তাহারে ঘেরিয়া হাসিছে কাঁদিছে,
সোহাগে হতেছে নত।
আমার শ্যামল তরুলতাগুলি
ফুলপল্লবভারে
সরস কোমল বাহুবেষ্টনে
বাঁধিতে চাহিছে তারে।
শিখর গগনলীন
দুর্গম জনহীন,
বাসনাবিহগ একেলা সেথায়
ধাইছে রাত্রিদিন।
চারি দিকে তার কত আসা-যাওয়া,
কত গীত , কত কথা —
মাঝখানে শুধু ধ্যানের মতন
নিশ্চল নীরবতা।
দূরে গেলে তবু, একা
সে শিখর যায় দেখা —
চিত্তগগনে আঁকা থাকে তার
নিত্যনীহাররেখা।

অভিমান
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কারে দিব দোষ বন্ধু, কারে দিব দোষ!
বৃথা কর আস্ফালন, বৃথা কর রোষ।
যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ,
কেহ কভু তাহাদের করেনি সম্মান।
যতই কাগজে কাঁদি, যত দিই গালি,
কালামুখে পড়ে তত কলঙ্কের কালি।
যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ
তারি কাছে তারি ‘পরে তোমার নালিশ!
নিজের বিচার যদি নাই নিজহাতে,
পদাঘাত খেয়ে যদি না পার ফিরাতে–
তবে ঘরে নতশিরে চুপ করে থাক্,
সাপ্তাহিকে দিগ্বিদিকে বাজাস নে ঢাক।
একদিকে অসি আর অবজ্ঞা অটল,
অন্য দিকে মসী আর শুধু অশ্রুজল।

Kamini Roy Poems

Kamini Roy born on 12 October 1864 in the village of Basunda, then in Bakerganj District of Bengal Presidency and now in Jhalokati District of Bangladesh. She worked to help Bengali women win the right to vote in 1926. Kamini Roy died in 1933.
পাছে লোকে কিছু বলে
-কামিনী রায়
করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে-
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি
নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
হৃদয়ে বুদবুদ মত
উঠে চিন্তা শুভ্র কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে আঁখি
সযতনে শুকায়ে রাখি;-
নিরমল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা-
চলে যাই উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্য যবে,
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা দেছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

প্রণয়ে ব্যথা
-কামিনী রায়
কেন যন্ত্রণার কথা, কেন নিরাশা ব্যথা,
জড়িত রহিল ভবে ভালবাসা সাথে?
কেন এত হাহাকার, এত ঝরে অশ্রু ধার?
কেন কণ্টকের কূপ প্রণয়ের পথে?
বিস্তীর্ণ প্রান্তর মাঝে, প্রাণ এক যবে খোঁজে
আকুল ব্যাকুল হয়ে সাথী একজন,
ভ্রমি বহু, অতি দূরে, পায় যবে দেখিবারে
একটি পথিক-প্রাণ মনেরি মতন ;-
তখন, তখন তারে, নিয়তি কেনরে বারে,
কেন না মিশাতে দেয় দুইটি জীবন?
অনুলঙ্ঘ্য বাধা রাশি, সম্মুখে দাঁড়ায় আসি–
কেন দুই দিকে আহা যায় দুই জন?
অথবা, একটি প্রাণ, আপনারে করে দান–
আপনারে দেয় ফেলে’ অপরের পায় ;
সে না বারেকের তরে, ভুলেও ভ্রুক্ষেপ করে,
সবলে চরণতলে দলে’ চলে’ যায় |
নৈরাশপূরিত ভবে, শুভযুগ কবে হবে,
এরটি প্রাণের তরে আর একটি প্রাণ
কাঁদিবে না সারা পথে ;– প্রণয়ের মনোরথে
স্বর্গমর্ত্যে কেহ নাহি দিবে বাধা দান?

কত ভালবাসি
-কামিনী রায়
জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
মা, তোমারে কত ভালবাসি!’
কত ভালবাস ধন?’ জননী সুধায়।
এ-তো-‘ বলি দুই হাত প্রসারি দেখায়।
তুমি মা আমারে ভালবাস কত খানি?’
মা বলেন, মাপ তার আমি নাহি জানি।’
তবু কতখানি, বল!’
যতখানি ধরে তোমার মায়ের বুকে।’
নহে তার পরে?’
তার বেশি ভালবাসা পারিনা বাসিতে’
আমি পারি’। বলে শিশু হাসিতে হাসিতে।

স্মৃতিচিহ্ন
-কামিনী রায়
ওরা ভেবেছিল মনে আপনার নাম
মনোহর হর্ম্মরূপে বিশাল অক্ষরে
ইষ্টক প্রস্তরে রচি চিরদিন তরে
রেখে যাবে ! মূঢ় ওরা, ব্যর্থ মনস্কাম।
প্রস্তর খসিয়াছে ভূমে প্রস্তরের পরে,
চারিদিকে ভগ্নস্তূপ, তাহাদের তলে
লুপ্ত স্মৃতি ; শুষ্ক তৃণ কাল-নদী-জলে
ভেসে যায় নামগুলি, কেবা রক্ষা করে!
মানব হৃদয় ভুমি করি অধিকার,
করেছে প্রতিষ্ঠা যারা দৃঢ় সিংহাসন,
দরিদ্র আছিল তারা, ছিল না সম্বল
প্রস্তরের এত বোঝা জড় করিবার ;
তাদের রাজত্ব হের অক্ষুণ্ণ কেমন
কাল স্রোতে ধৌত নাম নিত্যসমুজ্জ্বল।

চাহিবে না ফিরে
-কামিনী রায়
পথে দেখে ঘৃণাভরে
কত কেহ গেল সরে
উপহাস করি’ কেহ যায় পায়ে ঠেলে ;
কেহ বা নিকটে আসি,
বরষি সান্ত্বনারাশি
ব্যথিতেরে ব্যথা দিয়ে যায় শেষে ফেলে।
পতিত মানব তরে
নাহি কি গো এ সংসারে
একটি ব্যথিত প্রাণ, দুটি অশ্রুধার?
পথে পড়ে, অসহায়
পদতলে দলে যায়
দু’খানি স্নেহের কর নাহি বাড়াবার?
সত্য, দোষে আপনার
চরণ স্খলিত তার ;
তাই তোমাদের পদ উঠিবে ও শিরে?
তাই তার আর্তরবে
সকলে বধির হবে।
যে যাহার চলে যাবে—চাহিবে না ফিরে?
বর্তিকা লইয়া হাতে
চলেছিল এক সাথে
পথে নিভে গেল আলো পড়িয়াছে তাই;
তোমরা কি দয়া করে
তুলিবে না হাত ধরে
অর্ধদণ্ড তার লাগি থামিবে না ভাই?
তোমাদের বাতি দিয়া
প্রদীপ জ্বালিয়া নিয়া
তোমাদের হাত ধরি হোক অগ্রসর;
পঙ্কমাঝে অন্ধকারে
ফেলে যদি দাও তারে,
আঁধার রজনী তার রবে নিরন্তর।

Jibanananda Das Kobita: Jibanananda Das Poems

Jibanananda Das was an Indian poet, writer, novelist and essayist in the Bengali language. Jibanananda Das was the most underrated poet on his time period; he wrote profusely, but as he was a recluse and introvert, he did not publish most of his writings during his lifetime.
তোমায় আমি
-জীবনান্দ দাস
তোমায় আমি দেখেছিলাম বলে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।
নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে
পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে
জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।
তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।
জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।
এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।

আকাশলীনা
-জীবনান্দ দাস
সুরঞ্জনা, ঐখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ঐ যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা,
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে –আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? –তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস:
বাতাসের ওপারে বাতাস–
আকাশের ওপারে আকাশ।

স্বপ্নের হাত
-জীবনান্দ দাস
পৃথিবীর বাধা -এই দেহের ব্যাঘাতে
হৃদয়ে বেদনা জমে -স্বপনের হাতে
আমি তাই
আমারে তুলিয়া দিতে চাই।
যেই সব ছায়া এসে পড়ে
দিনের রাতের ঢেউয়ে -তাহাদের তরে
জেগে আছে আমার জীবন;
সব ছেড়ে আমাদের মন
ধরা দিত যদি এই স্বপনের হাতে!
পৃথিবীর রাত আর দিনের আঘাতে
বেদনা পেত না তবে কেউ আর –
থাকিত না হৃদয়ের জরা-
সবাই স্বপ্নের হাতে দিত যদি ধরা!
আকাশ ছায়ার ঢেউয়ে ঢেকে
সারাদিন -সারা রাত্রি অপেক্ষায় থেকে
পৃথিবীর যত ব্যথা -বিরোধ, বাস্তব
হৃদয় ভুলিয়া যায় সব
চাহিয়াছে অন্তর যে ভাষা,
যেই ইচ্ছা, যেই ভালোবাসা,
খুঁজিয়াছে পৃথিবীর পারে পারে গিয়া-
স্বপ্নে তাহা সত্য হয়ে উঠেছে ফলিয়া!
মরমের যত তৃষ্ণা আছে-
তারই খোঁজে ছায়া আর স্বপনের কাছে
তোমরা চলিয়া আস –
তোমরা চলিয়া আস সব!
ভুলে যাও পৃথিবীর ঐ ব্যথা -ব্যাঘাত -বাস্তব!
সকল সময়
স্বপ্ন -শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
যাদের অন্তরে–
পরস্পরে যারা হাত ধরে
নিরালা ঢেউয়ের পাশে পাশে
গোধূলির অস্পষ্ট আকাশে
যাহাদের আকাঙক্ষার জন্ম মৃত্যু -সব
পৃথিবীর দিন আর রাত্রির রব
শোনে না তাহারা!
সন্ধ্যার নদীর জল, পাথরে জলের ধারা
আয়নার মতো
জাগিয়া উঠিছে ইতস্তত
তাহাদের তরে।
তাদের অন্তরে
স্বপ্ন, শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
সকল সময়!…
পৃথিবীর দেয়ালের পরে
আঁকাবাঁকা অসংখ্য অক্ষরে
একবার লিখিয়াছি অন্তরের কথা-
সে সব ব্যর্থতা
আলো আর অন্ধকারে গিয়াছে মুছিয়া!
দিনের উজ্জ্বল পথ ছেড়ে দিয়ে
ধূসর স্বপ্নের দেশে গিয়া
হৃদয়ের আকাঙক্ষার নদী
ঢেউ তুলে তৃপ্তি পায় -ঢেউ তুলে তুপ্তি পায় যদি-
তবে ঐ পৃথিবীর দেয়ালের পরে
লিখিতে যেয়ো না তুমি অস্পষ্ট অক্ষরে
অন্তরের কথা!-
আলো আর অন্ধকারে মুছে যায় সে সব ব্যর্থতা!
পৃথিবীর অই অধীরতা
থেমে যায়, আমাদের হৃদয়ের ব্যথা
দূরের ধুলোর পথ ছেড়ে
স্বপ্নেরে -ধ্যানেরে
কাছে ডেকে লয়
উজ্জ্বল আলোর দিন নিভে যায়
মানুষেরও আয়ূ শেষ হয়
পৃথিবীর পুরানো সে পথ
মুছে ফেলে রেখা তার-
কিন্তু এই স্বপ্নের জগৎ
চিরদিন রয়!
সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব-
নক্ষত্রেরও আয়ু শেষ হয়!

আট বছর আগের এক দিন
-জীবনান্দ দাস
শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে – ফাল্গুনের রাতের আধাঁরে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ। বধূ শুয়ে ছিল পাশে – শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিল,আশা ছিল-জোৎসনায়,-তবে সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল – লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!
রক্তফেনা-মাখা মুখে মড়কের ইদুঁরের মত ঘাড় গুজি
আধার ঘুজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবেনা আর।
কোনোদিন জাগিবেনা আর।
জাগিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম – অবিরাম ভার
সহিবেনা আর –
এই কথা বলেছিলো তারে
চাঁদডুবে চ’লে গেলে – অদ্ভুদ আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোন এক নিস্তব্ধতা এসে।
তবুও তো পেঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাঙ আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে।
আরেকটি প্রভাতের ইশারায় – অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে
টের পাই যুথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা
মশা তার অন্ধকার সংগ্রামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে
রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রোদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কতো দেখিয়াছি।
ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন – যেন কোন বির্কীন জীবন
অধিকার ক’রে আছে ইহাদের মন;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথের কাছে
একগাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা – একা,
যে জীবন ফড়িঙের,দোয়েলের-মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
এই জেনে।
অশ্বথের শাখা
করেনি কি প্রতিবাদ ? জোনাকির ভিড় এসে
সোনালী ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা এসে
বলেনি কি; ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে
চমৎকার !
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার!’
জানায়নি পেঁচা এসে এ-তুমুল গাড় সমাচার ?
জীবনের এই স্বাদ-সুপক্ক যবের ঘ্রান হেমন্তের বিকেলের-
তোমার অসহ্য বোধ হ’লো;
মর্গে কি হৃদয় জুড়ালো
মর্গে – গুমোটে-
থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে।
শোনো
তবু এ মৃতের গল্প; কোনো
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখেনি কোন খাদ,
সময়ের উদ্বর্তনে উঠে এসে বধু
মধু-আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;
হাড়হাবাতের গ্লানি বেদনার শীতে
এ-জীবন কোনদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হ’য়ে শুয়ে আছে টেবিলের পরে।
জানি – তবু জানি
নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয় –
আর এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে,
ক্লান্ত – ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হ’য়ে শুয়ে আছে টেবিলের পরে।
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি,আহা,
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বত্থের ডালে বসে এসে,
চোখ পাল্টায়ে কয়: ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে ?’
চমৎকার !
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার-
হে প্রগাঢ় পিতামহী,আজো চমৎকার ?
আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো-বুড়ি চাঁদটারে আমি
ক’রে দিবো কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দুজনে মিলে শূন্য ক’রে চ’লে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।

পঁচিশ বছর পরে
-জীবনান্দ দাস
শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠেরউপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
পঁচিশ বছর পরে!’
এই বলে ফিরে আমি আসিলাম ঘরে;
তারপর কতবার চাঁদ আর তারা,
মাঠে মাঠে মরে গেল, ইদুর — পেচাঁরা
জোছনায় ধানক্ষেতে খুঁজে
এল-গেল। –চোখ বুজে
কতবার ডানে আর বায়ে
পড়িল ঘুমায়ে
কত-কেউ! — রহিলাম জেগে
আমি একা — নক্ষত্র যে বেগে
ছুটিছে আকাশে
তার চেয়ে আগে চলে আসে
যদিও সময়–
পঁচিশ বছর তবু কই শেষ হয়!–
তারপর — একদিন
আবার হলদে তৃণ
ভরে আছে মাঠে- –
পাতায় শুকনো ডাঁটে
ভাসিছে কুয়াশা
দিকে দিকে, চুড়ায়ের ভাঙা বাসা
শিশিরে গিয়েছে ভিজে — পথের উপর
পাখির ডিমের খোলা, ঠান্ডা-কড়কড়!
শসাফুল — দু-একটা নষ্ট শাদা শসা
মাকড়ের ছেঁড়া জাল, শুকনো মাকড়সা
লতায় — পাতায়;
ফুটফুটে জোছনারাতে পথ চেনা যায়;
দেখা যায় কয়েকটা তারা
হিম আকাশের গায় — ইদুর পেঁচারা
ঘুরে যায় মাঠে মাঠে, ক্ষুদ খেয়ে ওদের পিপাসা আজও মেটে,
পঁচিশ বছর তবু গেছে কবে কেটে!

Joy Goswami Kobita

Goswami writes in Bengali and is widely considered as one of the most important Bengali poets of his generation. Goswami was introduced to and encouraged with respect to poetry by his father, Madhu Goswami a well-known freedom fighter in the area.
যে ছাত্রটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে
-জয় গোস্বামী
কী বুঝেছে সে-মেয়েটি?
সে বুঝেছে রাজুমামা মায়ের প্রেমিক।
কী শুনেছে সে-মেয়েটি?
সে শুনেছে মায়ের শীৎকার।
কী পেয়েছে সে-মেয়েটি? -সে পেয়েছে জন্মদিন?
চুড়িদার, আলুকাবলি -কু-ইঙ্গিত মামাতো দাদার।
সে খুঁজেছে ক্লাস নোট, সাজেশন-
সে ঠেলেছে বইয়ের পাহাড়
পরীক্ষা, পরীক্ষা সামনে—দিনে পড়া, রাত্রে পড়া-
ও পাশের ঘর অন্ধকার
অন্ধকারে সে শুনছে চাপা ঝগড়া, দাঁত নখ,
ছিন্ন ভিন্ন মা আর বাবার।

সোজা কথা
-জয় গোস্বামী
গুলি লেগে পড়ে গেল।
তুলে ধরতে যাচ্ছে তার বউ।
বন্দুক উঁচিয়ে ধরো।
বলো- ‘না, তুলবি না-’
বলো- ‘যা সরে যা বলছি-’ তাও
যদি না শোনে তাহলে
স্বামীর সাহায্যকারী হাতদুটোয়
সোজা গুলি করো।
যে-নারী ধর্ষণ করতে বাধা দিচ্ছে তার
যৌনাঙ্গে লাঠির মাথা সোজা ভরে দাও
যন্ত্রণায় সে যখন দয়া চায়, গালাগালি করে
তার সামনে তার শিশুটিকে দু’পা ধরে
দুই দিকে টানো,
টানো,
যতক্ষণ না সোজাসুজি ছিঁড়ে যাচ্ছে
টানো!
একে বলে সোজা কথা।
এরই নাম ক্ষমতা দেখানো!

ইশ্বর আর প্রেমিকের সংলাপ
-জয় গোস্বামী
সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে
সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান
সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?
পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি
উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা
যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেই
বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!

কে বেশি কে কম
-জয় গোস্বামী
চিনতে পেরে গেছে বলে যার জিভ
কেটে নিল ধর্ষণের পরে
দু’হাতে দু’টো পা ধরে
ছিঁড়ে ফেললো যার শিশুটিকে
ঘাড়ে দু’টো কোপ মেরে যার স্বামীকে
ফেলে রাখলো উঠোনের পাশে
মরা অবধি মুখে জল দিতে দিল না
সেই সব মেয়েদের ভেতরে
যে-শোকাগ্নি জ্বলছে
সেই আগুনের পাশে
এনে রাখো গুলির অর্ডার দেওয়া
শাসকের দু’ঘন্টা বিষাদ
তারপর মেপে দ্যাখো
কে বেশি কে কম
তারপর ভেবে দেখ
কারা বলেছিল
জীবন নরক করব, প্রয়োজনে
প্রাণে মারব, প্রাণে!
এই ব’লে ময়ূর আজ
মুখে রক্ত তুলে
নেচে যায় শ্মশানে শ্মশানে
আর সেই নৃত্য থেকে দিকে দিকে
ছিটকে পড়ে জ্বলন্ত পেখম।

প্রীতি
-জয় গোস্বামী
ও প্রীতি,
দীর্ঘ ঈ, হস্ব্র ই-কারের ডানা
দুদিকে অর্ধেক মোড়া
চিঠিতে বসেছ, নিতে
বলেছ। নেবো না।
ডানা মেলে উড়ে যাও, প্রীতি
দূরে দীর্ঘ ঐ জল
পার হয়েএকপিঠ ডাঙা
ঐ যে উঠেছে,
চর
জানা বা অজানা
কত সব পরিবার
ঘর ছাইবে, ঘর ছাইল,
যাও,
ঐ চরে গিয়ে নামো,
হাত লাগাও
বসতির কাজে,
আমিও তোমার পিছে উড়ে যাই
সকলের সঙ্গে গিয়ে বসি
পুরোনো পাড়ার লোক দেখে যাই বসে-বসে
আলিঙ্গন, আলিঙ্গন,
আজ একাদশী,
এখন বন্যার জল নেমে গেছে,
ছেলেরা কাঠাম তুলছে জল থেকে
ঝাঁপাঝাঁপি
নদীপাড় পোহাচ্ছে রোদ্দুর,
খালাসীর কড়াইতে ছ্যাঁকছোঁক শুকনো লঙ্কা
শুকনো কাশি, ঝাল তরকারি
ভাঙা আস্ত দুটো লঞ্চ
গায়ে লেখা লম্বা নাম
দুর্গতিনাশিনী আর জয় মা অভয়া
মা ভেসে গেছেন কালকে, শুভ নমস্কার,
প্রীতি,
হ্যা, শুভ বিজয়া!

সোজা কথা
-জয় গোস্বামী
গুলি লেগে পড়ে গেল।
তুলে ধরতে যাচ্ছে তার বউ।
বন্দুক উঁচিয়ে ধরো।
বলো- ‘না, তুলবি না-’
বলো- ‘যা সরে যা বলছি-’ তাও
যদি না শোনে তাহলে
স্বামীর সাহায্যকারী হাতদুটোয়
সোজা গুলি করো।
যে-নারী ধর্ষণ করতে বাধা দিচ্ছে তার
যৌনাঙ্গে লাঠির মাথা সোজা ভরে দাও
যন্ত্রণায় সে যখন দয়া চায়, গালাগালি করে
তার সামনে তার শিশুটিকে দু’পা ধরে
দুই দিকে টানো,
টানো,
যতক্ষণ না সোজাসুজি ছিঁড়ে যাচ্ছে
টানো!
একে বলে সোজা কথা।
এরই নাম ক্ষমতা দেখানো!

সমুদ্রে পা ডুবিয়ে ছপছপ
-জয় গোস্বামী
সমুদ্রে পা ডুবিয়ে ছপছপ
যে-ধীবর হাঁটে
মাথার টোকাটি উল্টে ধরে
যে পায় টুপটাপ উল্কা, চাঁদ
সমুদ্রের ছাদ ফুটো ক’রে
একটি ঊষায় তার মাথাটি আগুন লেগে ফাটে
তোমার ধৈর্য্যের ভাঙে বাঁধ
আবার শতাব্দীকাল পরে
রক্ত চলতে শুরু করে আমার ডানার শক্ত কাঠে।

Banalata Sen

বনলতা সেন
-জীবনান্দ দাস
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনই দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে চাওয়া নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

Kobor Kobita

কবর
-জসীম উদ্দিন
এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!
সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি
লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।
এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে
ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!
হেস না¬ হেস না¬ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,
দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,
পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখিজলে।
আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।
তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,
গণিয়া গণিয়া ভুল করে গণি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক,
আয়-আয় দাদু, গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ।
এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ যে মানে না।
সেই ফালগুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কী জানিত কেউ?
গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা বা-জানরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!
তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দুহাতে জঢ়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিতে সারা দিনমান ভরি।
গাছের পাতার সেই বেদনায় বুনো পথে যেতো ঝরে,
ফালগুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো-মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়া যেতে গেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।
ঊদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল বুঝি,
কবর দেশের আন্ধারে ঘরে পথ পেয়েছিল খুজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের তাজ।
মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, বাছারে যাই,
বড় ব্যথা র’ল, দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষী আমার ওরে,
কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গন্ড ভিজায়ে নয়ন¬জলে,
কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ¬ব্যথার ছলে।
ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল¬ আমার কবর গায়
স্বামীর মাথার মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।
সেই যে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরাণের ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু¬ছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়।
জোনকি¬মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়;
ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!
এখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, দাদু যেন কাল এসে
দুদিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কশাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে
অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিছে ভাসি।
বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও পরাণে বাজিবে মরণ¬বীণ!
কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু! ধীরে।
ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেহ ভালো,
কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়।
আমার বু¬জীর তরেতে যেন গো বেস্ত নসিব হয়।
হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু, সাত বছরের মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা!
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
তোমার দাদির ছবিখানি মোর হদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।
একদিন গেনু গজনার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে।
কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে।
আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,
দাদু! ধর¬ধর¬ বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু,
কথা কস নাকো, জাগিয়া উটিবে ঘুম¬ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন মাটির তলে,
ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে,
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মসজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুরে,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূরে।
জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু¬ব্যথিত প্রাণ।

বাংলা কবিতা (Bangla Kobita)

মধ্য যুগে বাংলা কবিতা এর বেশ চর্চা হতো, কিন্তু কালক্রমে কবিতার চর্চা অনেকাংশে কমে গেছে। যুগে যুগে আমাদের দেশে অনেক জ্ঞানি গুনি কবি সাহিত্যিকের আবির্ভাব হয়েছে। আর বর্তমানেও আমাদের দেশের অনেক ভালোমানের কবি রয়েছেন। আমাদের সংগ্রহ করা Bangla Kobita গুলো আশা করছি আপনাদের পছন্দ হবে।

কবর
-কাজী নজরুল ইসলাম
আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও -নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।
যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাহি নীচতার।।
ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার
হৃদয়ের পরিসর,
যেন সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র-পর।
নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুঃখী
ক্ষুদ্র আত্মা তার।

আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
-কাজী নজরুল ইসলাম
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে-
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে-
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার -ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে-
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,
আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;
আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।
মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!

পথহারা
-কাজী নজরুল ইসলাম
বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে –
উদাস পথিক ভাবে।
‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
জানে না সে কে তাহারে চাবে।
উদাস পথিক ভাবে।
বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে
আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে,
ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে
শৈলমূলে শৈলবালা নাবে –
উদাস পথিক ভাবে।
বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি,
বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি,
বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি,
একলা থাকার গানখানি সে গাবে-
উদাস পথিক ভাবে।
হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায়
গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়,
পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায়
আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
উদাস পথিক ভাবে।

মা
-কাজী নজরুল ইসলাম
পথহারা
যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!
হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
কত করি উৎপাত
আবদার দিন রাত,
সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজে র’ন নাহি খেয়ে,
শত দোষী তবু মা তো তাজে না।
ছিনু খোকা এতটুকু,
একটুতে ছোট বুক
যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন
আরাম-বিরাম-হীন
দোলা দেয় শুধাতেন, ‘কি হোলো খোকন?’
আহা সে কতই রাতি
শিয়রে জ্বালায়ে বাতি
একটু আসুখ হলে জাগেন মাতা,
সব-কিছু ভুলে গিয়ে
কেবল আমায়ের নিয়ে
কত আকুলতা যেন জাগন্মাতা।
যখন জন্ম নিনু
কত আসহায় ছিনু,
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক-
মুখে নাহি ছিল বাক,
চাহনি ফিরিত শুধু আর পিছু পিছু।
তখন সে মা আমার
চুমু খেয়ে বারবার
চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায়
বুঝিয়া নিতেন যত
আমার কি ব্যথা হোতো,
বল কে ওমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়।
তারপর কত দুখে
আমারে ধরিয়া বুকে
করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়,
কত না সে সুন্দর
এ দেহে এ অন্তর
সব মোর ভাই বোন হেথা যত পড়।
পাঠশালা হ’তে যবে
ঘরে ফিরি যাব সবে,
কত না আদরে কোলে তুলি’ নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে
শুধাবেন কত সুখে
কত আজ লেখা হোলো, পড়া কত পাতা?’
পড়া লেখা ভাল হ’লে
দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে।
বলে, ‘মোর খোকামনি!
হীরা-মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারো!’ শুনে বুক ভরে।
গা’টি গরম হলে
মা সে চোখের জলে
ভেসে বলে, ‘ওরে যাদু কি হয়েছে বল’।
কত দেবতার ‘থানে’
পীরে মা মানত মানে-
মাতা ছাড়া নাই কারো চোখে এত জল।
যখন ঘুমায়ে থাকি
জাগে রে কাহার আঁখি
আমার শিয়রে, আহা কিসে হবে ঘুম।
তাই কত ছড়া গানে
ঘুম-পাড়ানীরে আনে,
বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম’।
দিবানিশি ভাবনা
কিসে ক্লেশ পাব না,
কিসে সে মানুষ হব, বড় হব কিসে;
বুক ভ’রে ওঠে মা’র
ছেলেরি গরবে তাঁর,
সব দুখ হয় মায়ের আশিসে।
আয় তবে ভাই বোন,
আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা’র;
মা’র বড় কেহ নাই-
কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!

আর্শীবাদ
-কাজী নজরুল ইসলাম
আপনার ঘরে আছে যে শত্রু
তারে আগে করো জয়,
ভাঙো সে দেয়াল, প্রদীপের আলো
যাহা আগুলিয়া রয়।
অনাত্বীয়রে আত্বীয় করো,
তোমার বিরাট প্রাণ
করে না কো যেন কোনোদিন কোনো
মানুষে অসম্মান।
সংসারের মিথ্যা বাঁধন
ছিন্ন হোক আগে,
কবে সে তোমার সকল দেউল
রাঙিবে আলোর রাগে।

Bengali Sad Poem

অচল স্মৃতি
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার হৃদয়ভূমি-মাঝখানে
জাগিয়া রয়েছে নিতি
অচল ধবল শৈল-সমান
একটি অচল স্মৃতি।
প্রতিদিন ঘিরি ঘিরি
সে নীরব হিমগিরি
আমার দিবস আমার রজনী
আসিছে যেতেছে ফিরি।
যেখানে চরণ রেখেছে সে মোর
মর্ম গভীরতম–
উন্নত শির রয়েছে তুলিয়া
সকল উচ্চে মম।
মোর কল্পনা শত
রঙিন মেঘের মতো
তাহারে ঘেরিয়া হাসিছে কাঁদিছে,
সোহাগে হতেছে নত।
আমার শ্যামল তরুলতাগুলি
ফুলপল্লবভারে
সরস কোমল বাহুবেষ্টনে
বাঁধিতে চাহিছে তারে।
শিখর গগনলীন
দুর্গম জনহীন,
বাসনাবিহগ একেলা সেথায়
ধাইছে রাত্রিদিন।
চারি দিকে তার কত আসা-যাওয়া,
কত গীত, কত কথা–
মাঝখানে শুধু ধ্যানের মতন
নিশ্চল নীরবতা।
দূরে গেলে তবু, একা
সে শিখর যায় দেখা–
চিত্তগগনে আঁকা থাকে তার
নিত্য-নীহার-রেখা।

আত্মসমর্পণ
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমার আনন্দগানে আমি দিব সুর
যাহা জানি দু-একটি প্রীতি-সুমধুর
অন্তরের ছন্দোগাথা; দুঃখের ক্রন্দনে
বাজিবে আমার কণ্ঠ বিষাদবিধুর
তোমার কণ্ঠের সনে; কুসুমে চন্দনে
তোমারে পূজিব আমি; পরাব সিন্দূর
তোমার সীমন্তে ভালে; বিচিত্র বন্ধনে
তোমারে বাঁধিব আমি, প্রমোদসিন্ধুর
তরঙ্গেতে দিব দোলা নব ছন্দে তানে।
মানব-আত্মার গর্ব আর নাহি মোর,
চেয়ে তোর স্নিগ্ধশ্যাম মাতৃমুখ-পানে
ভালোবাসিয়াছি আমি ধূলিমাটি তোর।
জন্মেছি যে মর্ত-কোলে ঘৃণা করি তারে
ছুটিব না স্বর্গ আর মুক্তি খুঁজিবারে।

দরিদ্রা
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দরিদ্রা বলিয়া তোরে বেশি ভালোবাসি
হে ধরিত্রী, স্নেহ তোর বেশি ভালো লাগে,
বেদনাকাতর মুখে সকরুণ হাসি,
দেখে মোর মর্ম-মাঝে বড়ো ব্যথা জাগে।
আপনার বক্ষ হতে রস-রক্ত নিয়ে
প্রাণটুকু দিয়েছিস সন্তানের দেহে,
অহর্নিশি মুখে তার আছিস তাকিয়ে,
অমৃত নারিস দিতে প্রাণপণ স্নেহে।
কত যুগ হতে তুই বর্ণগন্ধগীতে
সৃজন করিতেছিস আনন্দ-আবাস,
আজো শেষ নাহি হল দিবসে নিশীথে–
স্বর্গ নাই, রচেছিস স্বর্গের আভাস।
তাই তোর মুখখানি বিষাদ-কোমল,
সকল সৌন্দর্যে তোর ভরা অশ্রুজল।

মুক্তি
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চক্ষু কর্ণ বুদ্ধি মন সব রুদ্ধ করি,
বিমুখ হইয়া সর্ব জগতের পানে,
শুদ্ধ আপনার ক্ষুদ্র আত্মাটিরে ধরি
মুক্তি-আশে সন্তরিব কোথায় কে জানে!
পার্শ্ব দিয়ে ভেসে যাবে বিশ্বমহাতরী
অম্বর আকুল করি যাত্রীদের গানে,
শুভ্র কিরণের পালে দশ দিক ভরি’,
বিচিত্র সৌন্দর্যে পূর্ণ অসংখ্য পরানে।
ধীরে ধীরে চলে যাবে দূর হতে দূরে
অখিল ক্রন্দন-হাসি আঁধার-আলোক,
বহে যাবে শূন্যপথে সকরুণ সুরে
অনন্ত-জগৎ-ভরা যত দুঃখশোক।
বিশ্ব যদি চলে যায় কাঁদিতে কাঁদিতে
আমি একা বসে রব মুক্তি-সমাধিতে?

Bengali Sad Poem: Bangla Sad Kobita

অভিযান
-কাজী নজরুল ইসলাম
নতুন পথের যাত্রা-পথিক
চালাও অভিযান!
উচ্চ কণ্ঠে উচ্চার আজ –
“মানুষ মহীয়ান!”
চারদিকে আজ ভীরুর মেলা,
খেলবি কে আর নতুন খেলা?
জোয়ার জলে ভাসিয়ে ভেলা
বাইবি কি উজান?
পাতাল ফেড়ে চলবি মাতাল
স্বর্গে দিবি টান্।।
সরল সাজের নাইরে সময়
বেরিয়ে তোরা আয়,
আজ বিপদের পরশ নেব
নাঙ্গা আদুল গায়।
আসবে রণ-সজ্জা করে,
সেই আশায়ই রইলি সবে!
রাত পোহাবে প্রভাত হবে
গাইবে পাখি গান।
আয় বেরিয়, সেই প্রভাতে
ধরবি যারা তান।।
আঁধার ঘোরে আত্নঘাতী
যাত্র-পথিক সব
এ উহারে হানছে আঘাত
করছে কলরব!
অভিযানে বীর সেনাদল!
জ্বালাও মশাল, চল্ আগে চল্।
কুচকাওয়াজের বাজাও মাদল,
গাও প্রভাতের গান!
ঊষার দ্বারে পৌছে গাবি
জয় নব উত্থান!

বিদায় স্মরনে
-কাজী নজরুল ইসলাম
পথের দেখা এ নহে গো বন্ধু
এ নহে পথের আলাপন।
এ নহে সহসা পথ-চলা শেষে
শুধু হাতে হাতে পরশন।।
নিমেষে নিমেষে নব পরিচয়ে
হ’লে পরিচিত মোদের হৃদয়ে,
আসনি বিজয়ী-এলে সখা হ’য়ে,
হেসে হ’রে নিলে প্রাণ-মন।।
রাজাসনে বসি’ হওনি ক’ রাজা,
রাজা হ’লে বসি, হৃদয়ে,
তাই আমাদের চেয়ে তুমি বেশী
ব্যথা পেলে তব বিদায়ে।
আমাদের শত ব্যথিত হৃদয়ে
জাগিয়া রহিবে তুমি ব্যথা হ’য়ে,
হ’লে পরিজন চির-পরিচয়ে-
পুনঃ পাব তার দরশন,
এ নহে পথের আলাপন।

আসমানী প্রেম
-নির্মলেন্দ গুন
নেই তবু যা আছের মতো দেখায়
আমরা তাকে আকাশ বলে ডাকি,
সেই আকাশে যাহারা নাম লেখায়
তাদের ভাগ্যে অনিবার্য ফাঁকি!
জেনেও ভালোবেসেছিলাম তারে,
ধৈর্য ধরে বিরহ ভার স’বো;
দিনের আলোয় দেখাবো নিষ্প্রভ
জ্বলবো বলে রাতের অন্ধকারে।
আমায় তুমি যতোই ঠেলো দূরে
মহাকাশের নিয়ম কোথায় যাবে?
আমি ফিরে আসবো ঘুরে ঘুরে
গ্রহ হলে উপগ্রহে পাবে!
মাটি হলে পাবে শস্য- বীজে
বাতাস হলে পাবে আমায় ঝড়ে!
মৃত্যু হলে বুঝবে আমি কি যে,
ছিলেম তোমার সারাজীবন ধরে!

অশ্রু
-হুমায়ুন আহমেদ
আমার বন্ধুর বিয়ে
উপহার বগলে নিয়ে
আমি আর আতাহার,
মৌচাক মোড়ে এসে বাস থেকে নামলাম
দু’সেকেন্ড থামলাম।
টিপটিপ ঝিপঝিপ
বৃষ্টি কি পড়ছে?
আকাশের অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে?
আমি আর আতাহার
বলুন কি করি আর?
উপহার বগলে নিয়ে আকাশের অশ্রু
সারা গায়ে মাখলাম।
হি হি করে হাসলাম।

Koster Kobita

সংসার
-হুমায়ুন আহমেদ
শোন মিলি।
দুঃখ তার বিষমাখা তীরে তোকে
বিঁধে বারংবার।
তবুও নিশ্চিত জানি,একদিন হবে তোর
সোনার সংসার।
উঠোনে পড়বে এসে একফালি রোদ
তার পাশে শিশু গুটিকয়
তাহাদের ধুলোমাখা হাতে – ধরা দেবে
পৃথিবীর সকল বিস্ময়।

কব্বর
-হুমায়ুন আহমেদ
তিনি শায়িত ছিলেন গাঢ় কব্বরে
যার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বেঁধে দেয়া,
গভীরতা নয়।
কব্বরে শুয়ে তাঁর হাত কাঁপে পা কাঁপে
গভীর বিস্ময়বোধ হয়।
মনে জাগে নানা সংশয়।
মৃত্যু তো এসে গেছে, শুয়ে আছে পাশে
তবু কেন কাটে না এ বেহুদা সংশয়?

প্রেমিকার মৃত্যুতে
-হুমায়ুন আজাদ
খুব ভালো চমৎকার লাগছে লিলিআন,
মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে হবো না চৌচির।
তরঙ্গে তরঙ্গে ভ্রষ্ট অন্ধ জলযান
এখন চলবে জলে খুব ধীরস্থির।
অন্য কেউ ঢেলে নিচ্ছে ঠোঁট থেকে লাল
মাংস খুঁড়ে তুলে নিচ্ছে হীরেসোনামণি;
এই ভয়ে কাঁপবে না আকাশপাতাল,
থামবে অরণ্যে অগ্নি আকাশে অশনি।
আজ থেকে খুব ধীরে পুড়ে যাবে চাঁদ,
খুব সুস্থ হয়ে উঠবে জীবনযাপন।
অন্নে জলে ঘ্রাণে পাবো অবিকল স্বাদ,
চিনবো শত্রুর মুখে কারা-বা আপন।
বুঝবো নিদ্রার জন্যে রাত্রি চিরদিন,
যারা থাকে ঘুমহীন তারা গায় গান।
রঙিন রক্তের লক্ষ্য ঠাণ্ডা কফিন;
খুব ভালো চমৎকার লাগছে লিলিআন।

ডিজিটাল বন্ধু
-মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
পিংকিকে জিজ্ঞেস করে সুজন
বল তো মেয়ে বন্ধু তোমার ক’জন?
পিংকি বলে, হ্যাঁ
একজনই তো,পাশের বাসার মেয়ে।
শুনে সুজন হা হা করে হাসে
চোখ দুটো তার বড় হল ঘোর অবিশ্বাসে।
মাত্র একজন,কী আজব ব্যাপার
বন্ধু আমার পাকা সাতাশ হাজার!
ফেসবুকে তাদের সাথেই থাকি
বন্ধু ছাড়া এই জীবনের অর্থ আছে নাকী?
আমি যখন স্ট্যাটাস দিতে চাই,
দেবার আগেই শত শত লাইক পেয়ে যাই।
পিংকি শুনে অবাক হল ভারি
বাসায় তখন ফিরল তাড়াতাড়ি।
বন্ধু মেয়েটির গলা ধরে বলে
তুই কথা দে আমার কিছু হলে,
তুই থাকবি আমার পাশে পাশে
শুনে বন্ধু হি হি করে হাসে।
হেসে হেসে বলে,
হঠাৎ করে যাসনে যেন চলে।
ধরতে পারি ছুঁতে পারি একটা বন্ধু চাই
ডিজিটাল হাজার বন্ধুর কোনো দরকার নাই!

ভালবাসা
-মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
যাদের আছে টাকা
সবাইকে দিতে তাদের পকেট হল ফাঁকা।
আমার কিছুই নেই
কেমন করে কাউকে কিছু দেই?
শুধু জানি বুকের ভিতর ঠাসা
আছে শুধু সলিড ভালোবাসা।
সেখান থেকে তোমায় দিলাম কিছু
যখন তুমি হেঁটে এলে আমার পিছু পিছু।
পথের পাশে ছোট মেয়েটা বিক্রি করে ফুল
তাকেও কিছু দিতে হল হয়নি কোনো ভুল।
বুকের থেকে ভালোবাসা খাবলা দিয়ে নেই
ছোট ভাইটা দুষ্টু ভারি তাকে কিছু দেই।
মা’কে দিলাম আঁচলখানা ভরে
বাবার জন্য ঢেলে দিলাম রইল যেটুক পড়ে।
ভেবেছিলাম দিয়ে থুয়ে সবই বুঝি যাবে
ভালোবাসা খুঁজলে পরে আর কিছু কই পাবে?
কিন্তু দেখো অবাক ব্যাপার কতো
যত দিচ্ছি কমছে না তো,বাড়তে থাকে তত!
বুকের ভেতর এক্কেবারে ঠাসা
নূতন করে জমা হল সলিড ভালোবাসা।

Bangla Kobita Collection

সবার আমি ছাত্র
-সুনির্মল বসু
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হাতে ভাইরে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাই রে।
পাহাড় শিখায় তাহার সমান-
হই যেন ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে-
দিল-খোলা হই তাই রে।
সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
চাঁদ শিখাল হাসতে মোরে,
মধুর কথা বলতে।
ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর-
অন্তর হোক রত্ন-আকর,
নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে চলতে।
মাটির কাছে সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি শিক্ষা,
আপন কাজে কঠোর হতে
পাষান দিন দীক্ষা।
ঝরনা তাহার সহজ গানে,
গান জাগাল আমার প্রাণে,
শ্যাম বনানী সরসতা
আমায় দিল ভিক্ষা।
বিশ্বজোড়ে পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্রে।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়,
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে,
নেই দ্বিধা লেশমাত্র।

ব্যর্থ স্বপ্ন
-রোকেয়া সাখওয়াত হোসে
জীবনের পূর্ণতম পরিপূর্ণ খনে
আজি তুমি বহি’ দিলে পরাজয় ভার,
শিথিল ইন্দ্রিয় মোর হ’ল বার বার
কমল কন্টকে ক্ষত, বেদনা অপার-
সহিলাম নিতি নব। দূর আশা সনে
করিলাম পরিচয় অশুভ লগনে।
অগ্নিদাহ সম আজি জ্বলে মোর হিয়া,
আঁকিনু বেদনা বাণী বক্ষ রক্ত দিয়া।
পরিশ্রান্ত জীবনের শ্লথ অবেলায়
নিজ করে তুলি দিলে বেদনা হেলায়।
ব্যথাই হানিলে যদি হে প্রিয় নিঠুর,
কেন ভালে দিয়েছিলে মিলন সিঁদুর,
অন্ধ আমি পুঁজিলাম পাষাণ বেদিকা
পরিনু ললাটে মোর কলঙ্কের টীকা।

পরিণতি
-কালিদাস রায়
ইঁদুর বলে বয়স হলে
আমি-ই হব হাতি,
দূর্বা বলে বংশ হব
আমি তো তার নাতি।
রুই কাতলা যা হোক হব
কয় পুঁঠি মাছ হেঁকে,
গুগলি বলে শঙ্খ হব
হুগলী গাঙেই থেকে।

কেন মা তোমারি
-দ্বিজন্দ্রলাল রায়
কেন মা তোমারি —
সহাস বদন আজ মলিন নেহারি।
আলুলিত কেশপাশ,
তব এ মলিন বাস;
হেরিতে না পারি।
নীরবে সজল আঁখি, ঊর্ধভাবে স্থির রাখি,
ডাকিছ কাহারে বদ্ধ বাহুযুগ প্রসারি;
কেমনে সনতান গন
করিছে মা দরশন
তব অশ্রুবারি।

ইশ্বর! ইশ্বর!
-নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ঈশ্বরের সঙ্গে আমি বিবাদ করিনি।
তবুও ঈশ্বর
হঠাৎ আমাকে ছেড়ে কোথায় গেলেন?
অন্ধকার ঘর।
আমি সেই ঘরের জানলায়
মুখ রেখে
দেখতে পাই, সমস্তা আকাশে লাল আভা,
নিঃসঙ্গ পথিক দূর দিগন্তের দিকে চলেছেন।
অস্ফুট গলায় বলে উঠি:
ঈশ্বর! ঈশ্বর!

শেষ কথা

আমাদের সংগ্রহ করা বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) গুলো ভালো লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিতে ভূলবেন। সেই সাথে কোন কবিতা আপনার কাছে সবচাইতে ভালো লেগেছে, সেটাও আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Help Bn

Help Bn

Next Post
রবি ইন্টারনেট অফার ২০২০

রবি ইন্টারনেট অফার ২০২০

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recommended.

বাংলালিংক মিনিট অফার 2020

বাংলালিংক মিনিট অফার 2020

December 15, 2020

ফেসবুক থেকে আয় ২০২০: ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?

April 30, 2020

Trending.

Stylish New Download page Code for wapkiz

November 17, 2019

Liberty 3 Column Blogger Template Premium Version Free Download without footer credit

November 17, 2019
FTP Server BD 2020: Best FTP BD

FTP Server BD 2020: Best FTP BD

December 15, 2020

Trickbd Style AMP Blogger Template like Sahabat Responsive Template Free Download.

November 13, 2019
Termux এর মাধ্যমে যেকারো ফোন নাম্বার থেকে তার location সহ ছোট খাটো Info জেনে নিন খুব সহজেই

Termux এর মাধ্যমে যেকারো ফোন নাম্বার থেকে তার location সহ ছোট খাটো Info জেনে নিন খুব সহজেই

November 28, 2020
Helpbn

We bring you the best Premium WordPress Themes that perfect for news, magazine, personal blog, etc. Check our landing page for details.

Follow Us

Categories

  • Android
  • Android Tricks
  • Banglalink
  • Earnings
  • Facebook
  • GP SIM
  • Job
  • Job Circular
  • Movie
  • Robi SIM
  • Social Media
  • Tech
  • Telecom
  • Windows Tricks
  • YouTube

Recent News

GP Minute Offer 2021: Best Offer List

GP Minute Offer 2021: Best Offer List

December 15, 2020
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ১১ ডিসেম্বর ২০২০

সাপ্তাহিক চাকরির খবর ১১ ডিসেম্বর ২০২০

December 15, 2020
  • About
  • Advertise
  • Privacy & Policy
  • Contact

© 2020 Nillhost - Development Nillhost.

No Result
View All Result
  • Home

© 2020 Nillhost - Development Nillhost.